- প্রচ্ছদ
-
- চট্টগ্রাম
- চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগে-আওয়ামীলীগে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের আশংকায় সর্বোত্র নির্বাচনী উত্তাপ ছড়াচ্ছে: ভীত-সন্ত্রস্ত মানুষ
চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগে-আওয়ামীলীগে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের আশংকায় সর্বোত্র নির্বাচনী উত্তাপ ছড়াচ্ছে: ভীত-সন্ত্রস্ত মানুষ
প্রকাশ: ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ ৯:২৭ পূর্বাহ্ণ
এম, এ কাশেম, চট্টগ্রাম থেকে : দিন দিন নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে চট্টগ্রামের নির্বাচনী আসনগুলোতে। বিশেষ করে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাওয়ায় এলাকায় এলাকায় নির্বাচনী সহিংসতা–দ্বন্দ্ব–সংঘাত বাড়ার আশংকা করা হচ্ছে।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১২টি আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বী হতে যাচ্ছেন। এই কারণে চট্টগ্রামের প্রায় আসনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। প্রতিটি আসনে দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষেও নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন। অনেক আসনে দলের প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরোধ দিনদিন প্রকাশ্যে রূপ নিচ্ছে। এক প্রার্থী আরেক প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে এবং নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির দায়িত্বরত বিচারকের কাছে লিখিত অভিযোগ করছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ থেকে শুরু করে জমাদান–বাছাই প্রক্রিয়া এবং পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রামের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির দায়িত্বে নিয়োজিত বেশ কয়েকজন বিচারকের কাছে সংশ্লিষ্ট আসনের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণসহ অভিযোগ করেছেন। এসব অভিযোগের সত্যতা পেয়ে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির বিচারকগণ নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গকারী প্রার্থীকে তলব করে ব্যাখ্যা চেয়েছেন। অনেক প্রার্থীকে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন। যাদেরকে সশরীরে উপস্থিত হতে বলেছেন–তারা সশরীরে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আবার অনেকেই প্রতিনিধির মাধ্যমে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
ইতোমধ্যে হলফনামায় তথ্য গোপন করার অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগের এক প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছেন একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী। আজ আরেক আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগ এনে তার মনোনয়নও বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশনে আপিল করবেন আসনটির এক স্বতন্ত্র প্রার্থী।
মূলত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে ঘায়েল করতে নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কাছে এক
প্রার্থীর বিরুদ্ধে অপর প্রার্থীর অভিযোগ দিনদিন বাড়ছে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে চট্টগ্রামের ১২টি আসনে নির্বাচনী সহিংসতা–দ্বন্দ্ব–সংঘাত ততই বাড়বে বলে এখনকার পরিস্থিতি দেখে স্থানীয় নেতাকর্মী এবং নানান শ্রেণিপেশার মানুষ আশংকা করছেন। চট্টগ্রাম–১৫ সাতকানিয়া আংশিক–লোহাগাড়া আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর হলফনামায় তথ্য গোপন করেছেন উল্লেখ করে তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আজ শনিবার আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. আ.ম.ম. মিনহাজুল ইসলাম। গত ৪ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র বাছাইকালেও স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. আ.ম.ম. মিনহাজুল ইসলাম সাংসদ আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য গোপন করার বেশ কয়েকটি বিষয়টি তুলে ধরেন। এসময় জেলা প্রশাসক তাকে নির্বাচন কমিশনে আপিল করার পরামর্শ দেন। আজ নির্বাচন কমিশনে হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগ এনে আপিল করবেন বলে জানান স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. আ.ম.ম. মিনহাজুল ইসলাম। এর আগে এই আসনের এক স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তার কর্মী সমর্থকদের পথরোধ করে কটূক্তি এবং তার ছবি পোড়ানোর
অভিযোগের ভিত্তিতে সংসদ সদস্য আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীকে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি তলব করেছিলো। তিনি নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কাছে লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
এদিকে চট্টগ্রাম–১১ বন্দর–পতেঙ্গা আসনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ হালিশহর হোন্দলপাড়ার বসিন্দা সৈয়দ আনোয়ারুল করিম গত ৩ ডিসেম্বর এই সংসদীয় আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির দায়িত্বরত বিচারক (তৃতীয় যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ) আঞ্জুমান আরার আদালতে সরকারি সুযোগ সুবিধাসহ পুলিশ প্রটোকলে মুন্সিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ লতিফের পক্ষে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন বলে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির বিচারক সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী এবং এই আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সংসদ সদস্য এম এ লতিফকে তলব করে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেন। গত বৃহস্পতিবার তাঁরা দুইজনই তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
এদিকে চট্টগ্রাম–১০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু মনোনয়নপত্রের সাথে জমা দেয়া হলফনামায় তথ্য গোপন করেছেন বলে উল্লেখ করে তার মনোনয়নপত্র বাতিলের দাবিতে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছেন একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এম মনজুর আলম। তাঁর অভিযোগ, হলফনামায় ২০ বছর আগের এক হত্যা মামলার তথ্য গোপন করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত আপিলে উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু তার হলফনামায় ২০ বছর আগে হওয়া একটি মামলার তথ্য গোপন করেছেন এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা অর্থের তথ্য না দিয়ে হলফনামা দাখিল করেছেন।
মনোনয়নপত্র বাছাইকালে রিটানিং কর্মকর্তার কাছে এই বিষয়ে আপত্তি জানালে রিটার্নিং কর্মকর্তা বিষয়টি আমলে না নিয়ে প্রার্থীর দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেছেন। প্রার্থীর নির্বাচনী আইন ও আচরণবিধি ভঙ্গ প্রমাণিত বিধায় তার প্রার্থিতা বাতিল করার জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (২০২৩ পর্যন্ত সংশোধিত) এর দ্বিতীয় অধ্যায় ১৭ ধারা অনুযায়ী আপিল গ্রহণ করে তার মনোনয়নপত্র বাতিলের আবেদন করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনজুর আলম।
এদিকে চট্টগ্রাম–১২ পটিয়া আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী গত বৃহস্পতিবার তার নির্বাচনী এলাকা পটিয়া থানার ওসিকে বদলির জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে আবেদন করেছেন। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তার আবেদনে বলেন, ‘বর্তমান ওসি নেজাম উদ্দিনকে দিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু এবং পক্ষপাতহীন নির্বাচন সম্ভব নয়। আমি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে ওসি নেজাম উদ্দিনকে অন্যত্র বদলির আবেদন করছি।’
ওসিকে বদলি করার আবেদনে মোতাহেরুল ইসলাম আরো উল্লেখ করেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য হুইপ (পটিয়ার আসনের সংসদ সদস্য) নিজের ক্ষমতায় গত ১২ নভেম্বর নিজের পছন্দের ওসিকে বদলি করিয়ে আনেন। ওসি নেজাম উদ্দিনের নানা শ্বশুরের বাড়ি পটিয়ার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নে এবং তিনি হুইপের দূর সম্পর্কের আত্মীয় বলেও উল্লেখ করা হয় আবেদনে।’ এছাড়া অভিযোগে মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে ওসি নেজাম উদ্দিন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের হুমকি ধমকি দিয়ে আসছেন এবং নানা ধরনের সুবিধাদি প্রার্থীকে দিচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন মোতাহেরুল ইসলাম।
এদিকে বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান গত ৩০ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় আচরণবিধি ভঙ্গ ও সাংবাদিক হেনস্থার বিষয়ে তার বিরুদ্ধে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হলে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান সাংসদ মোস্তফিজুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। নোটিশ পাওয়ার পরদিন ১ ডিসেম্বর মোস্তাফিজুর রহমানের পক্ষে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিতে আসেন বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল গফুর। লিখিত জবাবে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
এ রিপোর্ট লেখার সর্বশেষ মুহুর্ত্ব পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা গেছে, জেলার প্রায় আসন গুলোতে আওয়ামী লীগে আওয়ামী লীগের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত-সংঘর্ষের আশংকায় এতদাঞ্চলের মানুষজনের মাঝে ভীতি দেখা দিয়েছে।
Please follow and like us:
20 20