এম আবদুল্লাহ : গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হচ্ছে বাক, ব্যক্তি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। একটি রাষ্ট্রে গণতন্ত্র বিরাজমান কি না- তা বোঝা যায় সে দেশের গণমাধ্যম কতটা স্বাধীন তা দেখে। যখন টিভি, রেডিও, অনলাইনসহ গণমাধ্যমের এত প্রসার ঘটেনি, তখন সংবাদপত্রে চোখ বুলিয়েই অনুধাবন করা যেত গণতন্ত্রের সূচক কোন পর্যায়ে। সংবাদমাধ্যম হচ্ছে জনসাধারণ ও রাষ্ট্রের মুখপত্র। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় বিষয়সহ সব বিষয়ের মানুষের কথা বলার অধিকার রয়েছে। ঠিক এমনিভাবে মানুষের পক্ষে, রাষ্ট্রের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার প্ল্যাটফরম হচ্ছে সংবাদমাধ্যম। মানুষের সুখ-দুঃখ, সমাজের ন্যায়-অন্যায়, সরকারের দমন, পীড়ন, অবিচার-অনাচার উঠে আসে সংবাদপত্রের পাতায়। কিন্তু অধিকাংশ সরকারই এটা সহ্য করতে পারে না। বিশেষ করে, অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী, একনায়ক ও ফ্যাসিবাদী সরকার তাদের জুলুম অত্যাচার আড়াল করতে প্রথমেই টার্গেট করে সংবাদমাধ্যমকে। টুঁটি চেপে ধরে কিংবা চোখ রাঙিয়ে সত্য প্রকাশ বাধাগ্রস্ত করতে চায়।
সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি জিয়ার সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত নিবিড়। ব্যক্তিগত আগ্রহ ও নিজস্ব অনুপ্রেরণা থেকেই তিনি এ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান উপলব্ধি করেছিলেন গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে অবশ্যই মত ও পথের শত ফুল ফুটতে দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা অনস্বীকার্য বা অপরিহার্য। সংবাদমাধ্যমের শক্তি, ক্ষমতা ও গুরুত্ব তিনি গভীরভাবে অনুভব করেছিলেন। তিনি মনে করতেন, দেশের সার্বিক স্থিতিশীলতা ও টেকসই উন্নয়নে গণমাধ্যম ব্যাপক অবদান রাখতে পারে। ১৯৭৫ সালে জিয়াউর রহমান উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক থাকাকালে প্রথমবারের মতো তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। তখনই তিনি গণমাধ্যমের সমস্যা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হন। রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্রসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সুদূরপ্রসারী উন্নয়নের চিন্তা তার মাথায় আসে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকার কারণে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশর সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের জন্য কী অবদান রেখেছেন, তা বিশদভাবে জানার আগে দরকার তার দায়িত্ব গ্রহণের আগে দেশ সংবাদপত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অবস্থা কেমন ছিল। স্বাধীনতা-উত্তর শেখ মুজিব সরকার ১৯৭৫ সালে অনেকটা আকস্মিকভাবে সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বাংলাদেশে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে। আর বাকশালী শাসনকে নিষ্কণ্টক করার জন্য ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন দেশে চারটি ছাড়া সব দৈনিক পত্রিকার প্রকাশনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। চারটি সংবাদপত্রকে মূলত সরকারি প্রচারপত্র হিসেবে রাষ্ট্রীয় পরিচালনায় রাখা হয়। দেশে তখন একটিও বেসরকারি সংবাদপত্র ছিল না। এতে সহস্রাধিক সাংবাদিক ও সংবাদপত্রসেবীকে পেশাচ্যুত, কর্মচ্যুত হয়ে বেকারত্বের অভিশাপে নিমজ্জিত হতে হয়। জবরদস্তিমূলকভাবে তখন সাংবাদিক ও অন্যান্য পেশাজীবীকে বাকশালে যোগদানে বাধ্য করা হয়েছিল। এভাবে আওয়ামী সরকার বাকস্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করেছিল।
১৯৭২-৭৫ সালে আওয়ামী শাসনে আইন করে সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়ার আগেই সাংবাদিকদের ওপর নিপীড়ন চালানো হয়। সম্পূর্ণ অন্যায় ও অপমানজনকভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল দৈনিক বাংলার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রথিতযশা সাহিত্যিক আবুল কালাম শামসুদ্দীনকে। মিথ্যা অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরে কারানির্যাতন চালানো হয় দৈনিক পূর্বদেশ সম্পাদক মাহবুবুল হকের ওপর। তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হলেও তাকে ওই পদে ফিরে যেতে দেওয়া হয়নি। ‘সুপ্রিম টেস্ট’ শিরোনামে সম্পাদকীয় লেখায় মুজিব সরকার অন্যায়ভাবে অপসারণ করেছিল ‘বাংলাদেশ অবজারভার’ সম্পাদক এদেশের কিংবদন্তিতুল্য ও পথিকৃৎ সাংবাদিক আবদুস সালামকে। আওয়ামী অপশাসনের বিরুদ্ধে অকুতোভয়ে কলম চালনার দায়ে দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি আল মাহমুদকে ধরে নিয়ে নিক্ষেপ করা হয় কারাগারে। রাতের অন্ধকারে অফিসে তাণ্ডব চালিয়ে বন্ধ করা হয়েছিল গণকণ্ঠ পত্রিকা।
৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ট্র্যাজেডি ও পরবর্তী প্রায় তিন মাসের রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সিপাহি জনতার মিলিত অভ্যুত্থানে ক্ষমতার কেন্দ্রে আসেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। ৭ নভেম্বর দায়িত্ব পেয়ে অচিরেই তিনি উপলব্ধি করেন যে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ছাড়া জনগণের আবেগ-অনুভূতি কেউ জানতে পারবে না। গণতন্ত্রও বিকশিত হতে পারবে না। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিতের মাধ্যমেই দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথ সুগম হবেÑএ বিশ্বাস থেকেই জেনারেল জিয়া সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সব বাধা-বিপত্তি দূর করার উদ্যোগ নেন। সেই সঙ্গে সংবাদকর্মীদের কল্যাণে নানা পদক্ষেপ নিতে থাকেন।
রাষ্ট্রপতি জিয়া গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হচ্ছে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা। সংবাদমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পেলে তাতে দেশ, জাতি ও সরকার সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে। তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিলÑপ্রশাসনযন্ত্রকে দুর্নীতিমুক্ত ও গণমুখী করতে হলে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পরই সাংবাদিকদের লেখার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অবারিত করেছিলেন। তিনি যখন বন্ধ সব সংবাদপত্র চালুর ব্যবস্থা করে স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ সুগম করলেন, তখন প্রবীণ সাংবাদিক ও সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা নির্মল সেন লিখেছিলেনÑ‘পাখা ভারী হয়ে গেছে, এত দিনের দলননীতির পর মুক্ত পাখা মেলে উড়তে কষ্ট হচ্ছে সাংবাদিকদের’। নির্মল সেনের এই অনুভূতি প্রমাণ করে স্বাধীনতার পর কার্যত শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময়ই প্রথম সাংবাদিকরা স্বাধীনতার স্বাদ পান।
আর সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত ছিল বলে তার রাষ্ট্র পরিচালনাকালে সারা দেশে ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব হয়েছিল। দেশের উন্নয়নে সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা অনুধাবন করেছিলেন বলেই শহীদ জিয়া সে সময়ের জনপ্রিয় সাপ্তাহিক বিচিত্রার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে আপনারা জনমত গড়ে তুলুন, যা অবশ্যই সংগঠিত ও ব্যবহৃত হবে জাতীয় উন্নয়ন ও পুনর্গঠনের জন্য। সবাইকে একটি কথা মনে রাখতে হবে, শুধু অনৈক্যের কারণে এদেশ সুদীর্ঘ দুশো বছর বিদেশি শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক শোষিত হয়েছে। কাজেই জাতীয় ঐক্যই শুধু আমাদের জীবনে আনতে পারে শক্তি, অগ্রগতি ও সুখ-শান্তি। ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য এ আমাদের এক অবশ্য কর্তব্য। আমাদের বর্তমান উৎসর্গিত হোক ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য।’ (বিচিত্রা, ২৪ মার্চ ১৯৭৮ সংখ্যা)
প্রথমে জিয়াউর রহমান সংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক সব কালাকানুন শিথিল করে দেশের সর্বত্র থেকে সংবাদপত্র প্রকাশে উৎসাহ দেন। শুধু তাই নয়, প্রকাশিত সংবাদপত্র টিকিয়ে রাখা সরকারের দায়িত্ব বলেই তিনি মনে করতেন। তিনি শেখ মুজিবের ডিক্লারেশন বাতিল করা সংবাদপত্রগুলো একে একে প্রকাশের অনুমতি দেন। সেই সঙ্গে নতুন পত্রিকা প্রকাশের পথ অবারিত করেন। তিনি মফস্বল শহর রাজশাহী থেকে ‘দৈনিক বার্তা’ নামে একটি প্রথম শ্রেণির পত্রিকা প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। ১৯৭৬ সালের ৭ জুলাই জিয়াউর রহমান রাজশাহী সফরে যান। রাজশাহী সার্কিট হাউস মিলনায়তনে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে সাংবাদিকদের সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। সাংবাদিকদের তিনি আশ্বাস দেন দুই মাসের মধ্যে রাজশাহী থেকে সরকারের উদ্যোগে একটি জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশিত হবে। উত্তরাঞ্চলের অবহেলিত জনসাধারণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকবে সেই সংবাদপত্রে। প্রতিশ্রুতিতেই তিনি থেমে থাকেননি। ঠিক দুই মাস পর অক্টোবরে দৈনিক বার্তার প্রকাশনা শুরু হয়। এ পত্রিকা ঘিরে সমগ্র উত্তরাঞ্চলে তথ্যপ্রবাহের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে যায়। পত্রিকা অফিস থেকে শুরু করে থানাপর্যায় পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক সাংবাদিকের কর্মসংস্থান হয়। উত্তরের মানুষের সুখ, দুঃখ, হাসি-কান্নার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠে দৈনিক বার্তায়।
কোমলমতি শিশু-কিশোরদের নিয়ে গভীর ভাবনা ছিল শহীদ জিয়ার। দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের সমাজসচেতন করে গড়ে তুলতে ‘কিশোর বাংলা’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশে উদ্যোগী হন তিনি। পরে এ পত্রিকাটি শিশু-কিশোরদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ১৯৭৯ সালের গোড়ায় তিনি ‘গণতন্ত্র’ নামে একটি রাজনৈতিক সাপ্তাহিক প্রকাশে পৃষ্ঠপোষকতা দেন। পাশাপাশি দৈনিক জনপদও প্রকাশ করার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু জনপদ প্রকাশনায় আর্থিক অস্বচ্ছতা দেখা দিলে একই বছরের মধ্যভাগে রাষ্ট্রপতি জিয়ার প্রচেষ্টায় প্রকাশিত হয় জাতীয় পত্রিকা ‘দৈনিক দেশ’। পত্রিকাটির নামকরণ করেন খোদ জিয়াউর রহমান। তিনি ইচ্ছা করলে নিজ মালিকানায় পত্রিকাটি প্রকাশ করতে পারতেন। কিন্তু তা তিনি করেননি। পত্রিকাটি প্রকাশের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের পূর্ণ স্বাধীনতা দেন তিনি।
জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ডিক্লারেশনের শর্ত শিথিল করার কারণে ঢাকা থেকে শুরু করে বিভাগীয়, জেলা এমনকি থানাপর্যায় থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকা প্রকাশ হতে থাকে। এসব পত্রিকা টিকিয়ে রাখতে জিয়াউর রহমান সরকারি বিজ্ঞাপন বণ্টননীতিও শিথিল করেন। বিভিন্ন সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন বণ্টনব্যবস্থা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণমুক্ত করেন তিনি। একই সঙ্গে সরকারি বিজ্ঞাপনের ৬০ ভাগ ঢাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকায় এবং বাকি ৪০ ভাগ মফস্বল থেকে প্রকাশিত পত্রিকায় বণ্টনের ব্যবস্থা করেন তিনি। এর ফলে সারা দেশে সংবাদপত্র প্রকাশনায় নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়।
১৯৭২ সালে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন যে কয়েকটি মূল দাবি উত্থাপন করেছিল, তার অন্যতম ছিল সাংবাদিকদের জন্য নতুন বেতন বোর্ড গঠন, প্রেস কমিশন গঠন এবং প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স অর্ডিন্যান্স বাতিল। পাকিস্তান আমলে ১৯৬১ সালে সাংবাদিকদের জন্য একটি বেতন বোর্ড গঠিত হয়। পরে নতুন বেতন বোর্ড গঠনের দাবি কোনো সরকার কর্ণপাত করেনি। বাংলাদেশ হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে একটি বেতন বোর্ড গঠিত হলেও তা ছিল অকার্যকর। রাষ্ট্রপতি জিয়া সংবাদকর্মীদের চাকরি ও আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি গভীরভাবে ভেবেছিলেন। সেই ভাবনা থেকেই তিনি সংবাদপত্রসেবীদের বেতন-ভাতা নির্ধারণে ওয়েজবোর্ড গঠন করেন। ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমান বেতন বোর্ড পুনরুজ্জীবিত করেন এবং ১৯৭৭ সালের ১ মে তার আন্তরিক প্রচেষ্টায় সংবাদপত্রসেবীদের জন্য ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে ঘোষিত বেতন স্কেল বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ইমপ্লিমেন্টেশন সেলও গঠন করে দেন। তিনি সাংবাদিক, মালিক, সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠন করেন প্রেস কনসালটেটিভ কমিটি। এই কমিটির কাজ ছিল স্বাধীন সাংবাদিকতার অন্তরায়গুলো দূর করা।
কথায় কথায় সাংবাদিকদের যাতে কোমরে দড়ি দিয়ে বেঁধে জেলে পুরতে না পারে, সে জন্য তিনি প্রেস কাউন্সিল গঠন করেন। ১০ জানুয়ারি ১৯৭৮। বঙ্গভবনে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক। সভাপতিত্ব করছেন রাষ্ট্রপতি জিয়া। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষা, সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার মানোন্নয়ন এবং পেশাগত উৎকর্ষের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছিল। এ সময় তিনি প্রেস কাউন্সিল গঠনের ঘোষণা দেন। তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলেন।
সাংবাদিকদের আরেকটি দাবি ছিল প্রেস কমিশন গঠন। জিয়াউর রহমান প্রেস কমিশন গঠনেরও উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং এ ব্যাপারে পদ্ধতিগত কার্যক্রম চলতে থাকে। বিভিন্ন জটিলতায় কমিশন গঠনের কাজ ধীরগতিতে চলছিল। সে কারণে জীবিত অবস্থায় প্রেস কমিশনের আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা তিনি দেখে যেতে পারেননি। তার ধারাবাহিকতায় ১৯৮২ সালে একটি প্রেস কমিশন গঠিত হয়। কমিশনের পক্ষ থেকে একটি রিপোর্ট পেশ করার কথা ছিল। কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন আতাউর রহমান খান। সেই প্রেস কমিশনের রিপোর্ট আজও প্রকাশিত হয়নি।
রাষ্ট্রপতি জিয়া বুঝেছিলেন মানসম্মত নির্মোহ সাংবাদিকতার জন্য সুশিক্ষিত সাংবাদিক প্রয়োজন। সাংবাদিকদের পেশাগত মান উন্নয়ন ও তাদের সুষ্ঠুভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তিনি বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) প্রতিষ্ঠা করেন নিজে উদ্যোগী হয়ে। পেশায় বিজ্ঞ ও বিদগ্ধ ব্যক্তিদের মাধ্যমে এমনকি বিদেশ থেকে প্রশিক্ষক এনে তিনি সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। ১৯৭৬ সালের ১৮ আগস্ট বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গেজেটে প্রকাশিত হয়।
নগরজীবনে আবাসন সংকটে সাংবাদিকরা ভীষণভাবে কষ্ট পাচ্ছিলেন। স্বল্প আয়ের সাংবাদিকদের আবাসন সমস্যা ও দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে তিনি মিরপুরে ২২ বিঘা জমি সাংবাদিক সমবায় সমিতির নামে বরাদ্দ করেছিলেন। দেড় শতাধিক সাংবাদিকের সেখানে আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছিল। এখন সেখানে বহুতল ভবন করে সাংবাদিকরা শুধু বসবাসই করছেন না, ভাড়া দিয়ে নিজেদের আর্থিক সচ্ছলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন।
সাংবাদিকদের মানমর্যাদার বিষয়ে রাষ্ট্রপতি জিয়া ছিলেন খুবই সচেতন। ১৯৭৬ সালে তোপখানা রোডে পুরোনো লাল বিল্ডিংয়ে প্রেস ক্লাব ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণের তোড়জোড় চলছিল। আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত ব্যবসায়ী প্রিন্স করিম আগা খান প্রেস ক্লাব ভবন নির্মাণের ব্যয় বহনের ঘোষণা দেন। ক্লাব ভবনের ভিত্তি স্থাপন করতে এসে জিয়াউর রহমান বিষয়টি জানতে পারেন। তিনি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি। সাংবাদিক নেতাদের ডেকে তিনি বলেন, প্রেস ক্লাব হচ্ছে একটি জাতীয় ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। এর উন্নয়ন মানে গণতন্ত্রের উন্নয়ন, সাংবাদিকতার প্রসার। অতএব বিদেশি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অর্থানুকুল্যে এ প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মিত হওয়া উচিত নয়। তাহলে সাংবাদিকদের মর্যাদা ও নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এটা নির্মিত হবে আমাদের নিজস্ব টাকা দিয়ে। তিনি জানালেন প্রেস ক্লাব ভবন নির্মাণের সব ব্যয়ভার গ্রহণ করবে খোদ সরকার।
এভাবে বেসরকারি ও সরকারি সংবাদমাধ্যমে শহীদ জিয়ার নানা যুগান্তকারী পদক্ষেপ বিস্মৃত হলে তার প্রতি অবিচার করা হবে। সংবাদপত্র, সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্র শিল্পে অবদানের জন্য রাষ্ট্রপতি জিয়া সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।(সংগৃহিত )
শনিবার, ৩১ মে, ২০২৫ | |
ওয়াক্ত | সময় |
সুবহে সাদিক | ভোর ৪:৪৫ পূর্বাহ্ণ |
সূর্যোদয় | ভোর ৬:১১ পূর্বাহ্ণ |
যোহর | দুপুর ১২:৫৬ অপরাহ্ণ |
আছর | বিকাল ৪:১৬ অপরাহ্ণ |
মাগরিব | সন্ধ্যা ৭:৪১ অপরাহ্ণ |
এশা | রাত ৯:০৭ অপরাহ্ণ |