ঢাকা : নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে উদযাপিত হলো ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত বিজয়ের পর অর্জিত বাংলাদেশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতি পুনর্জাগরণ।
আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই সারা দেশ থেকে আগত নানান বয়সী উৎফুল্ল জনসাধারণের অংশগ্রহণে মুখরিত হয়ে উঠেছে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ। বেলুন, ফেস্টুন আর আলোকসজ্জায় সেজেছে আজকের এই ঐতিহাসিক দিনের আয়োজন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে অনুষ্ঠানে হাজারো মানুষের ঢল লক্ষ্য করা গেছে এ আয়োজনে। বেলা ১২ টা থেকে শুরু হয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফ্যাসিস্ট এর পলায়ন উদযাপন, ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ, স্পেশাল ড্রোন ড্রামা ‘ডু ইউ মিস মি?’ চলেছে।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয় সহযোগিতা করেছে।
বেলা ১২টায় ‘সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠী’র শিল্পীবৃন্দের পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তারা একে একে পরিবেশন করে ‘এই দেশ আমার বাংলাদেশ’, ‘আয় তারুণ্য আয়’, ‘জীবনের গল্প’, ‘ওমা আর কেঁদো না’, ‘যাঁদের জন্য পেলাম আবার নতুন বাংলাদেশ’, ‘জারিগান’সহ ইসলামিক সংগীত। এরপর ‘কলরব শিল্পী-গোষ্ঠী’ পরিবেশন করে ‘তোমার কুদরতি পায়ে’, ‘দে দে পাল তুলে দে’, ‘ধন ধান্য পুষ্পভরা’, ‘ইঞ্চি ইঞ্চি মাটি’ ও ‘দিল্লি না ঢাকা’। কণ্ঠশিল্পী নাহিদ পরিবেশন করেন ‘পলাশীর প্রান্তর’ ও ‘৩৬ জুলাই’ গানসমূহ। এরপর ‘নোঙর তোল তোল’, ‘তুমি প্রিয় কবিতা’, ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’, ‘চল চল’ ও ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’ গানগুলো পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী তাশফি।
বেলা ২ টা ২৫ মিনিটে বেলুন উড়িয়ে ফ্যাসিস্ট এর পলায়ন উদযাপন করা হয়। এসময় সানা বয়সী মানুষ ল্যাডারের মাধ্যমে প্রতীকী এ পলায়ন দৃশ্য উপভোগ করেন। এরপর ‘চিটাগাং হিপহপ হুড’ তারা ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘আমরা আসছি ঢাকা কাপাইতে’সহ কয়েকটি সংগীত পরিবেশন করেন। ‘কথা ক’, ‘হুদাই হুতাশে’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’সহ কয়েকটি র্যাপ সংগীত পরিবেশন করেন র্যাপার সেজান। ব্যান্ডদল শূন্য পরিবেশন করে ‘শত আশা’, ‘বেহুলা’, ‘রাজাহীন রাজ্য’ ও ‘শোন মহাজন’ গানসমূহ। এরপর মঞ্চে উঠেন কণ্ঠশিল্পী ইথুন বাবু ও মৌসুমি। তারা পরিবেশন করেন ‘কোলাজ সংগীত’, ‘আমাদের বাংলাদেশ’, ‘মা’ (পলাশ)’, ‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’ (মৌসুমি), ‘এখনো আমরা জেগে আছি’, ‘একটা চাদর হবে চাদর’সহ আরো কয়েকটি গান।
চাদিকে উৎসুক জনতার মাঝে দেখা যায় নীরবতা। বিকেল ৫ টা বেজে ১০ মিনিটে ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের পর সংগীত পরিবেশন করেন গণমানুষের শিল্পী সায়ান। তিনি পরিবেশন করেন আমরা জুলাইয়ের বন্ধু গানসহ কয়েকটি গান। একে একে মঞ্চে আসেন ব্যান্ডদল সোলরে পার্থ বড়ুয়া, ওয়ারফেজ, বেসিক গিটার লার্নিং স্কুল, ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ব্যান্ডদল এফ মাইনর, কণ্ঠশিল্পী পারশা মাহজাবিন, কণ্ঠশিল্পী এলিটা করিম। পুরো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যান্ড ও দলের প্রায় ২৫০ জনেরও বেশি শিল্পী অংশগ্রহণ করেছেন।
এরপর মঞ্চে কয়েকজন ছাত্রদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় স্লোগান।
আয়োজনের অন্যতম অনুষঙ্গ স্পেশাল ড্রোন ড্রামা শো “ডু ইউ মিস মি?”। ‘ড্রোন শো’-তে প্রায় ২ হাজার ড্রোনের কারুকার্য মণ্ডিত উড্ডয়নের মাধ্যমে ঐতিহাসিক জুলাইয়ের গল্প তুলে ধরা হয়। প্রদর্শন করা হয়, জুলাইয়ে ঢাকাসহ সারা দেশের ছাত্র-জনতা স্রোতের মতো বেরিয়ে এসে আন্দোলনে নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটায় এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে।
অনুষ্ঠানে এসময় বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের, উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, গণপূর্ত ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়াসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবসহ বিভিন্ন বাহিনী ও দপ্তর, সংস্থার প্রধান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজ ও ছাত্র প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, আজ সন্ধ্যায় প্রকাশনা সংস্থা দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) ও নেত্র নিউজের যৌথ আয়োজনে ‘উইটনেস টু দি আপরাইজিং’ বইটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার অলিয়ঁস ফ্রঁসেজে।
গণ-অভ্যুত্থানের দলিল হয়ে ওঠা এই বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন শহীদ নাফিজের বাবা-মা ও লাশ বহনকারী রিকশা চালক নুর মিয়া। প্রকাশনা উৎসবে আলোচনা করবেন নারী ও মানবাধিকার কর্মী খুশী কবীর, ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান, চলচ্চিত্র পরিচালক আশফাক নিপুণ, অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। সঞ্চালনা করবেন নেত্র নিউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইখতিশাদ আহমেদ।
গণ-অভ্যুত্থানের প্রত্যক্ষদর্শী আলোকচিত্রী জীবন আহমেদ তার অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়ে বলেন, পুরো সময়টা জুড়ে তিনি ছিলেন রাজপথে। জুলাই ২০২৪-এর উত্তাল দিনগুলো ধরা পড়েছে তার ক্যামেরায়, যেগুলো একইসঙ্গে ইতিহাসের স্মারক এবং রাষ্ট্রীয় নির্মমতা ও জনতার প্রতিরোধের মুখোমুখি লড়াইয়ের প্রামাণ্য দলিল।
এই গণ-আন্দোলনে জীবন আহমেদের ভূমিকা কেবল সাংবাদিক-আলোকচিত্রী হিসেবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকে নি, তিনি রাষ্ট্রযন্ত্রের আস্ফালন উপেক্ষা করে সত্যকে তুলে আনার প্রতিজ্ঞায় নিজের জীবন বাজি রেখেছেন, গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, দিনের পর দিন ঘরছাড়া-ছন্নছাড়া জীবনযাপন করেছেন, তিনি আন্দোলনের সঙ্গে পুরোপুরি একাত্ম এক অংশীজন হয়ে উঠেছেন। , ৫ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস)
মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০২৫ | |
ওয়াক্ত | সময় |
সুবহে সাদিক | ভোর ৫:০৮ পূর্বাহ্ণ |
সূর্যোদয় | ভোর ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ |
যোহর | দুপুর ১:০৪ অপরাহ্ণ |
আছর | বিকাল ৪:২৯ অপরাহ্ণ |
মাগরিব | সন্ধ্যা ৭:৩৯ অপরাহ্ণ |
এশা | রাত ৯:০১ অপরাহ্ণ |