আজ বৃহস্পতিবার | ২৩শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৭ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১৩ই সফর, ১৪৪৭ হিজরি | সকাল ১১:২৮
বিডি দিনকাল ডেস্ক : গণতন্ত্র অভিযাত্রায় জাতীয় স্বার্থে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত বিজয় র্যালি-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ আহ্বান জানান। র্যালিতে যোগ দিতে দুপুর থেকেই নয়াপল্টনে জড়ো হন বিএনপি নেতাকর্মীরা। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ঢাকা মহানগর ছাড়াও আশপাশের জেলাগুলো থেকেও নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা নিয়ে নয়াপল্টনে আসেন। একপর্যায়ে ফকিরাপুল থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত লোকারণ্য হয়ে পড়ে। জনসমুদ্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা।
বিকাল ৪টার পর নয়াপল্টন থেকে র্যালিটি শুরু হয়। এতে নেতৃত্ব দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ দলের সিনিয়র নেতারা। র্যালিটি বিজয়নগর, পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেস ক্লাব, কদম ফোয়ারা, মৎস্যভবন মোড়, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন সড়কের সামনে দিয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়। ঢাকা ছাড়াও দেশের সকল বিভাগীয় শহরে একযোগে বিজয় র্যালি করছে বিএনপি নেতারা।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, প্রিয় রাজনৈতিক দলের সদস্যবৃন্দ বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মতভেদ থাকবে। কিন্তু সেই ভিন্নমত নিরসনে আলোচনা হবে। তবে জাতীয় পরিষদে গণতন্ত্রের পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যাতে মুখ দেখাদেখি বন্ধ না হয়, সেই লক্ষ্যে জাতীয় স্বার্থে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রয়োজন। কারণ আমি বিশ্বাস করি, ধর্ম, দর্শন, মত যার ?যার, রাষ্ট্র আমাদের সবার।
তারেক রহমান বলেন, জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে বিএনপি কী ধরনের রাষ্ট্র, সরকার এবং রাজনীতি পরিচালনা করবে দলের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ৩১ দফার মাধ্যমে একটি রূপরেখা জনগণের সামনে আমরা উপস্থাপন করেছি। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে। দেশ এবং জনগণের কল্যাণে এই সকল কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বিএনপি জনগণের সমর্থন এবং সহযোগিতা চায়।
সংসদ নির্বাচনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশের জনগণের সরাসরি ভোটের কাছে দায়বদ্ধ, জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মঙ্গলবার জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে একটি সময়সীমা ঘোষণা করেছে। জনগণের অভিপ্রায় বাস্তবায়নের দাবিতে জুলাই সনদ ঘোষণা করা হয়েছে। জনগণের অধিকার বাস্তবায়নের এইসব উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, মানুষের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার যাত্রা পথে বর্তমানে আমরা ইতিহাসের যে সন্ধিক্ষণ পার করছি, এই ঐতিহাসিক সময়টির জন্য দেশের গণতান্ত্রিক জনগণকে দীর্ঘ দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছে। ফ্যাসিবাদ শাসনের দীর্ঘ সময়ে এই আন্দোলনে আমরা আমাদের হাজারো সহকর্মী সহকর্মীকে হারিয়েছি, আমাদের অনেক সন্তান-স্বজনের বুকের তাজা রক্ত দেখতে হয়েছে।
তিনি বলেন, বিরোধী আন্দোলনের সময় বিএনপিসহ বিরোধী দল এবং মতের নেতাকর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মিথ্যা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দেয়া হয়েছে। বিএনপি’র এমন নেতা রয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে শতাধিক, দুই শ’ তিন শ’ মামলা রয়েছে, এমনকি ৪ শতাধিক মামলা রয়েছে। গুম-অপহরণের শিকার হয়েছেন বিএনপিসহ বিরোধী দলের দলের শত শত রাজনৈতিক নেতাকর্মী। শুধুমাত্র ২০২৪ সালে গণ-অভ্যুত্থানে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। খুনিদের বন্দুকের নল থেকে মায়ের কোলে থাকা চার বছরের শিশুও রেহাই পায়নি। ক্ষমতালোভী ফ্যাসিস্টদের কারণে আমাদের অনেক সাহসী সেনা কর্মকর্তারা হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছেন, বিডিআরের নাম পর্যন্ত পাল্টে দেয়া হয়েছে। ভেঙে দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশের মনোবল।
এ বিজয় অন্ধকার থেকে আলোর কথা বলবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের আমলে দেশ অন্ধকারের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছিল। আমি বলবো, আজকের এই অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আলোর পথে যাত্রা। তবে এই যাত্রা খুব সহজ নয়। বর্তমানে দেশের জনগণের সামনে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক অপার সম্ভাবনা এবং সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমরা যদি এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের জনগণের রাজনৈতিক শক্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারি, জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করতে পারি তাহলে ভবিষ্যতে আর কেউ ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পাবে না।
গণতন্ত্র না থাকলে কেউই আমরা নিরাপদ নই মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, যিনি যেই দলের সদস্য রাজনৈতিক দলের সদস্য হন না কেন, আমাদের অবশ্যই সকলের একটি কথা মনে রাখা দরকার প্রতিবাদ শাসন আমলে আমরা কেউই নিরাপদ ছিলাম না, আমাদের সন্তানেরা কেউ নিরাপদ থাকতে পারেনি। আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছিল, আমাদের সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিয়ে গণতন্ত্রকামী জনগণের জন্য সমগ্র বাংলাদেশটাকেই বর্বর বন্দিখানা, আয়নাঘর বানিয়ে ফেলা হয়েছিল।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারেক রহমানের নেতৃত্বেই আগামীতে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে খুব শিগগিরই। আমাদের জুলাই ঘোষণাপত্র হয়েছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যে দৃষ্টিভঙ্গি ৩১ দফা, সেই ৩১ দফা বাস্তবায়িত হতে চলেছে সংস্কারের মধ্যদিয়ে। তারেক রহমানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এই সমাবেশে উনি এখানে উপস্থিত আছেন। আসুন আজকে আমরা সবাই উনাকে ধন্যবাদ জানাই যে, তিনি আমাদেরকে নেতৃত্ব দিয়ে আমাদের মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। আমি ধন্যবাদ জানাবো, দেশের সমস্ত মানুষকে রাজনৈতিক দলগুলোকে, ছাত্রদেরকে এবং এটা না বললে নয়, আমি দেশপ্রেমিক সেনা বাহিনীকেও আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই, তাদের সহযোগিতায় আমরা এই বিজয় অর্জন করতে পেরেছি।
র্যালিতে ফ্যাসিবাদের প্রতিকৃতি: র্যালিতে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি বানিয়ে প্রদর্শন করা হয়। এক নারীকে খাঁচার ভেতরে বন্দি করে শেখ হাসিনার প্রতীকী চরিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়। লাল রঙের শাড়ি পরে দুই হাত তুলে জাতির কাছে ক্ষমা চান প্রতীকী নারীটি। খাঁচার গায়ে কাগজে লেখা হয়, আমি সকাল-সন্ধ্যা মিথ্যা কথা বলি, আমি আমার দেশের টাকা চুরি করে বিদেশে পাচার করি, আমি ভোট চোর। এ ছাড়া ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর জেলবন্দি প্রতিকৃতি র্যালিতে ফুটিয়ে তোলা হয়।
বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক বক্তব্য রাখেন।
এ ছাড়া র্যালিতে বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপন, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, শাহজাদা মিয়া, লুৎফুজ্জামান বাবর, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেলসহ ,বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু , ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, দক্ষিণের সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার,যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের আহবায়ক শরীফ উদ্দিন জুয়েল, সদস্য সচিব সাজ্জাদুল মিরাজ, যুবদল দক্ষিণের আহবায়ক এনামুল হক, সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক দলের আহবায়ক মো. সুমন ভূইয়া, সদস্য সচিব বদরুল আলম সবুজ, মহানগর উত্তর শ্রমিক দলের সদস্য সচিব কামরুল জামান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এ্যাড. মকবুল হোসেন সরদার, হারুনুর রশিদ, লিটন মাহমুদ, মনির হোসেন, মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, এবিএমএ রাজ্জাকসহ কেন্দ্রীয়, অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠনের নেতারা অংশ নেন।
বৃহস্পতিবার, ৭ আগস্ট, ২০২৫ | |
ওয়াক্ত | সময় |
সুবহে সাদিক | ভোর ৫:০৯ পূর্বাহ্ণ |
সূর্যোদয় | ভোর ৬:৩১ পূর্বাহ্ণ |
যোহর | দুপুর ১:০৪ অপরাহ্ণ |
আছর | বিকাল ৪:২৯ অপরাহ্ণ |
মাগরিব | সন্ধ্যা ৭:৩৭ অপরাহ্ণ |
এশা | রাত ৮:৫৯ অপরাহ্ণ |