আজ রবিবার | ২৬শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১০ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১৬ই সফর, ১৪৪৭ হিজরি | রাত ৩:৫৪
স্টাফ রিপোর্টার : বৃহস্পতিবার (০৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর মহাখালীস্থ গাউসুল আজম কমপ্লেক্সে মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে লিঁয়াজো কমিটির সভা শেষে ব্রিফিংয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, রাজনৈতিক ভিন্ন মত থাকতে পারে এটা ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু কোন দলের প্রভাব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর এমনভাবে চাপানো ঠিক না, যেটাতে মনে হয় যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখল করা হয়েছে। এটা জবরদস্তি। সেটা কৌশলেই হোক আর বাস্তবেই হোক। আমরা (বিএনপি) এটার বিরোধী।
নজরুল ইসলাম খান আরো বলেন , আমরা যদি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাই, আমরা চেষ্টা করবো কোন প্রতিষ্ঠানই যেন কোন ধরণের জবরদস্তি না হয়। সবাই যেন যার যার ইচ্ছা অনুযায়ী, যা অনুশীলন করতে চায় তা করতে পারে। আমরা ক্ষমতায় এলে নিশ্চিত করবো যাতে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়সহ কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেনো কারো দখলে না থাকে। শিক্ষার প্রকৃত অগ্রগতি যেন নিশ্চিত হয়।
এর আগে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সালাহ উদ্দিন আহমদ।
জনমত গঠনে আলেম-ওলামাগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মন্তব্য করে নজরুল ইসললাম খান বলেন, আমাদেরর নেতা (জিয়াউর রহমান) বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এমন এক সময়ে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যখন এদেশের মানুষেরা এমন একটি রাজনৈতিক দল দেখতে চেয়েছিল যে দল তাদের আদর্শকে ধারণ করবে, ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি অনুগত থাকবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনভাব ধারণ করবে। সে কারণে তিনি (জিয়াউর রহমান) সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এবং মূলনীতিতে আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও আস্থার কথা বলেছেন। আমরা তাঁরই কর্মী, শহীদ জিয়া যা করেছিলেন পরবর্তীতে তা অন্যরা বদলাতে পারেনি, এরপরে অনেক সরকার এসেছে কিন্তু বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বাদ দেয়া সম্ভব হয়নি। আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও আস্থা বাদ দেয়ার চেষ্টা করেছিল কিন্তু সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন। আপনাদের হাত দিয়ে প্রতিবছর লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে এবং তারা সমাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। আমি আপনাদের কাছে ভোট চাইতে আসিনি, দোয়া চাইতে এসেছি। আমি বিশ্বাস করি আপনাদের দোয়া সহযোগিতা আমাদেও খুব কাজে লাগবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপি ইসলামে মূল্যবোধে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল। আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দল, সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংযোজনকারী দল এবং মহান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস সংবিধানে সংযুক্তকারী দল। এবারও সংস্কার কমিশনে আমার এর পক্ষে অবস্থান নিয়েছি এবং প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা মাদরাসা শিক্ষা সম্প্রসারণ চাই, কিন্তু মাদরাসা শিক্ষাঙ্গনকে একটি নির্ধারিত দলীয় রাজনীতির কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হোক সেটা চাই না।
সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, বাংলাদেশে ইসলাম, কোরআন, সুন্নাহর বিপরীতে শরীয়ত বিরোধী কোন আইন প্রণীত হবে না। আমরা রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক, ইসলামপন্থী সমস্ত মানুষের সাথে কথা বলেছি। আমরা হাটহাজারী মাদরাসায় গিয়েছিলাম, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর নায়েবি আমীরের সাথে কথা বলেছি, ছারছীনা পীর সাহেবের সাথে দেখা করেছি, আলিয়া মাদরাসা ধারার যেসকল মুরব্বি আছেন তাদের সাথে দেখা করেছি, কথা বলেছি। উদ্দেশ্য একটাই বাংলাদেশের সকল জনগোষ্ঠিকে আমরা একত্রিত করে, ঐক্যবদ্ধ করে এমনভাবে দেশ পরিচালনা করতে চাই যেখানে বিভক্তি থাকবে না। সবাইকে একত্রে ধারণ করে, বাংলাদেশের গণমুখী চেতনাকে ধারণ করে সম্পূর্ণ গণতাান্ত্রিক ধারায় রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চাই। সেজন্য আমরা রাজনৈতিক মতাদর্শের উর্ধ্বে উঠে সকল মতাদর্শের মানুষের সাথে কথা বলেছি। যাতে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্য সমুন্নত করা যায়, দৃঢ় করা যায়। বিভক্তি নয় আমরা ঐক্য চাই।
বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদর্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন,২০ হাজার দরবার, ২০ হাজার প্রতিষ্ঠান ও ৫৫ লাখ ছাত্র-ছাত্রীর প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন। এর আগে মাদরাসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরো বেশি থাকলেও বিগত আওয়ামী সরকারের মাদরাসা বিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে ছাত্রছাত্রী অনেক কমেছে। তবে এখনো ৫৫ লাখ শিক্ষার্থী আছে এবেং ২০ হাজার প্রতিষ্ঠান আছে।
গত ১০ মাস ধরে মাদরাসা শিক্ষায় জামায়াতে ইসলাম একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে মন্তব্য করে জমিয়াত সভাাপতি বলেন, এ দেশের মানুষ নিজেদের অর্থে মাদরাসা শিক্ষা শুরু করেছেন। কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করেননি। ইসলামী ভাবধারা, ইসলামী তাহজিব, তামাদ্দুন, এদেশে ত্বরিকা, তাসাউফ যদি ঠিক থাকে শুধু এ উদ্দেশ্যে এটা করা হয়েছে। মাদরাসাগুলোতে এতো বছর কেউ কেউ রাজনীতি করেছে ব্যক্তিগতভাবে। জমিয়াতুল মোদার্রেছীন সচেতনভাবে চেষ্টা করেছে যাতে কোন ধরণের রাজনীতি করতে না পারে। এতোদিন গোপনে অনেকে অনেক কিছু করছে। কিন্তু গত ১০ মাস ধরে আমরা শঙ্কিত মাদরাসা শিক্ষায় সরাসরি হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রণ করছে জামায়াত। এটা সমাজের জন্য অত্যন্ত ভয়ঙ্কর বিষয়।
তিনি বলেন, একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যদি শিক্ষাক্রম তৈরি হয়, শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত হয় তাহলে আফগানিস্তানের যে দশা হয়েছে আমাদের এখানেও একই রকম অবস্থা হবে। তাদের (জামায়াত) তৈরী কারিকুলামে মা, শিক্ষার্থী তৈরী করা হচ্ছে। এটা জাতির জন্য অত্যন্ত ভয়ংকর বিষয়।
ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি’কে বলেছি, আপনি জ্ঞানী মানুষ জ্ঞান চর্চা করুন। আপনি দল করবেন না। কিন্তু উনি কথা শুনেননি। ওরা (জামায়াত) পুরো মাদরাসা বোর্ডকে দলের আখরা বানিয়েছে। মাদরাসা অধিদপ্তরও ঐ দলের দখলে। আমরা চাই বিএনপি ক্ষমতায় থাকুক আর বিরোধী দলে থাকুক, বাংলাদেশের একটা অভিভাবক, তাদের দায়-দায়িত্ব আছে। শুধু মাদরাসা শিক্ষা না কোন শিক্ষাই যেন নির্দিষ্ট দলের নিয়ন্ত্রণে না থাকে। আর মাদরাসায় যাতে কোন রাজনীতি না হয়। মাদরাসা আমরা ইসলামি ছাত্র শিবির এমনকি ছাত্রদলও চাই না। দ্বীনের প্রয়োজনে যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু চর্চা হবে। ব্যক্তিগতভাবে রাজনীতি করবে, ভোট দিবে, এটা তাদের অধিকার।
এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, আপনারা (বিএনপি নেতৃদ্বয়) নিশ্চিন্তে থাকুন, এদেশের আলেম-ওলামাগণ, ২০ হাজার দরবার, ৫৫ লাখ ছাত্র-ছাত্রী তাদের অভিভাবক সকলে মিলে সহিহ ইসলামের পক্ষে যারা থাকবে, ইসলাম নিয়ে যারা রাজনীতি যারা না তাদের সাথে থাকবে। তাদের পেছনে এদেশের লাখ লাখ হাক্কানী আলেম-ওলামাদেও পাশাপাশি কোটি কোটি ভোটারও থাকবে। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী। এসময় জমিয়াতের কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার, ৯ আগস্ট, ২০২৫ | |
ওয়াক্ত | সময় |
সুবহে সাদিক | ভোর ৫:১০ পূর্বাহ্ণ |
সূর্যোদয় | ভোর ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ |
যোহর | দুপুর ১:০৪ অপরাহ্ণ |
আছর | বিকাল ৪:২৯ অপরাহ্ণ |
মাগরিব | সন্ধ্যা ৭:৩৬ অপরাহ্ণ |
এশা | রাত ৮:৫৭ অপরাহ্ণ |