আজ সোমবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১৬ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি | ভোর ৫:০৬
স্টাফ রিপোর্টার : কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম উইংয়ে কর্মরত তিনজন কল্যাণ সহকারী—তৌহিদ, ফরিদ ও আনোয়ার—এবং তাদের সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরে দূতাবাসের সেবা ব্যবস্থায় বিস্তৃত দুর্নীতি চালিয়ে আসছেন। তাদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছে জাল সনদ, রাজনৈতিক সুপারিশ, অবৈধ ব্যবসা এবং প্রবাসীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মতো নানা গুরুতর অভিযোগ।
রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নিয়োগ : মন্দুব ফরিদ (শরীয়তপুর): ২০১০-২০১১ সালে দূতাবাসে Welfare Assistant হিসেবে নিয়োগ পান। তৎকালীন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহানের সুপারিশ এবং রাষ্ট্রদূত সৈয়দ সাঈদ শাহেদ রেজা-এর অনুমোদনে, কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াই ড্রাইভার কাম মন্দুব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
তৌহিদ মজুমদার : ২০০৪-৫ সালে কুয়েতে অবৈধ ইন্টারনেট ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। তার ভাই ও পিলিপিনো স্ত্রীকে গ্রেফতার ও ডিপোর্ট করা হয়। ২০১০ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা আসার পর চট্টগ্রামের একাধিক নেতা (হাসান মাহমুদ, আজম নাসির) এর সুপারিশে রাষ্ট্রদূতের অনুমোদন নিয়ে দূতাবাসে ঝাড়ুদার হিসেবে নিয়োগ পান।
আনোয়ার সাদাত : কুয়েতে আগে ঘরের ড্রাইভার এবং টেক্সি চালক ছিলেন। ২০১০ সালে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশারফের সুপারিশে Welfare Assistant হিসেবে নিয়োগ পান।
মো:জসিম : ২০০৯ সালে তার মা তৎকালীন আওয়ামী মহিলালীগ নেত্রী এবং আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা ,সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার তাপসের সুপারিশে পাসপোর্ট সেকশনে নিয়োগ পান।
জাল সনদ ও রক্ষাকারী কর্মকর্তা : তাদের ডিগ্রি সনদ ছিল জাল। সাবেক শ্রম কাউন্সিলর আব্দুল লতিফ খান এবং প্রথম সচিব আনিসুজ্জামান মোটা অঙ্কের বিনিময়ে সনদ সত্যায়িত করেন এবং বোর্ডের অনলাইন ওয়েবসাইটে নাম তুলেও দেন। রাজনৈতিক পরিচয় থাকায় অভিযোগ করা সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
দুর্নীতির বিস্তার ,তাদের কর্মকাণ্ডে রয়েছে—ভিসা বাণিজ্য, আউটপাস, পাসপোর্ট নবায়ন ও ড্রাইভিং লাইসেন্সে অনিয়ম। প্রবাসীদের থানায় ঢোকানো-বের করার নামে মোটা অংকের চাঁদাবাজি ।বিদেশগামী শ্রমিক প্রেরণের নামে অর্থ আদায় । দূতাবাসে মদ-বিক্রয়, জুয়া ও অশ্লীল আড্ডা।
তাদের টর্সারসেল (আয়না ঘর) এবং গুমখুন, চাঁদাবাজি, দুর্ব্যবহার ও নারীর প্রতি নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে নাম না প্রকাশে প্রবাসীদের।
সাবেক এমপি পাপুল ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক সংযোগ : কুয়েত কারাগারে আটক প্রাক্তন এমপি শহিদুল ইসলাম পাপুল এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সহায়তায় তারা দূতাবাসে নিরাপদ থাকতেন। আব্দুল লতিফ খান ও তিন কল্যাণ সহকারী ছিলেন পাপুলের একান্ত সহযোগী।
অন্যান্য সহযোগী ও রিসেপশনিষ্ট : নুরজামান-২০১৭ সালে দিনাজপুর-৪ আসনের এমপির সুপারিশে দূতাবাসে নিয়োগপ্রাপ্ত। খারাপ ব্যবহার এবং ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
তছলিম: লেবার সেকশনের প্রধানের ড্রাইভার, বিদেশি কুটনৈতিকদের আপ্যায়ন থেকে ব্যবসায়িক সুবিধা পর্যন্ত সব কুয়েত দূতাবাসে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।
অস্বাভাবিক সম্পদ : সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর তারা বিপুল সম্পদের মালিক।
তৌহিদ: চট্টগ্রামের হালিশহরে সাত তলা ভবন, দোকানপাট ও ৫০ বিঘার বেশি জমি।
ফরিদ: ফরিদপুর শহরে সাত তলা ভবন, তিনটি মার্কেট, গরুর খামার, মাছের ঘের ও ১০০ বিঘার বেশি জমি।
আনোয়ার: ফেনীতে পাঁচ তলা ভবন, বড় মার্কেট ও ৫০ বিঘার বেশি জমি।
প্রবাসীদের ক্ষোভ ও তদন্ত দাবি : প্রবাসীরা বারবার মানববন্ধন, বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ এবং নানা টিভি চ্যানেলর টকশো গুলোতে অনেক প্রবাসী উপস্থিত হয়ে প্রতিবাদ করলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা হয় নি। তারা বলছেন—“এই তিনজন এত ক্ষমতাবান যে অভিযোগের পাহাড় জমলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।”
প্রবাসীরা এখন মাননীয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তির দাবি করেছেন। তারা বলেন—“অতীতের সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে দ্রুত তদন্ত না করলে প্রবাসীদের আস্থার শেষ ভরসাটুকুও ধ্বংস হয়ে যাবে।”
রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | |
ওয়াক্ত | সময় |
সুবহে সাদিক | ভোর ৫:২৬ পূর্বাহ্ণ |
সূর্যোদয় | ভোর ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ |
যোহর | দুপুর ১২:৫৬ অপরাহ্ণ |
আছর | বিকাল ৪:২৪ অপরাহ্ণ |
মাগরিব | সন্ধ্যা ৭:১০ অপরাহ্ণ |
এশা | রাত ৮:২৭ অপরাহ্ণ |