আজ শুক্রবার | ২২শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৭ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি | ভোর ৫:৩৩

আশরাফুল হক রুবেল কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি-: অসময়ে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দুধকুমার নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের খাড়ুয়ারপাড় সবুজপাড়া এলাকায় শতাধিক পরিবার নদীর অব্যাহত ভাঙনে সর্বস্বান্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
নদীভাঙন কবলিত মানুষের দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং চরাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের দাবিতে চর বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনের আহ্বান জানিয়েছে স্থানীয়রা। এ দাবিতে রোববার সকালে চর উন্নয়ন কমিটি ঘোগাদহ ইউনিয়ন শাখার উদ্যোগে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আব্দুল জলিল।
এতে বক্তব্য রাখেন জেলা চর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু, সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আশরাফুল হক রুবেল, সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ খাজা শরিফ উদ্দিন আহমেদ রিন্টু, আবদুর রাজ্জাক, আমিনুল ইসলাম, যাত্রাপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান রহিমুদ্দিন হায়দার রিপন, এরশাদ আলী, সাবেক মেম্বার আব্দুল আউয়াল, আব্দুর রহমান, পনির উদ্দিন, সাবেরা খাতুন ও সালেমা খাতুন প্রমুখ।
প্রতিকূল আবহাওয়া ও বৃষ্টির মধ্যেও খাড়ুয়ারপাড় সবুজপাড়া নদীতীরবর্তী এলাকার প্রায় পাঁচ শতাধিক নদীভাঙনকবলিত মানুষ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন।
চরবাসীর আর্তনাদ
দুধকুমার নদীর তীরে দাঁড়িয়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে শরীফ বলেন, “আমার বাড়ি ১৮ বার নদীতে ভেসে গেছে। এখন এমন অবস্থা—সকাল থেকে দুপুর হয়ে গেছে, পেটে একমুঠো ভাতও পড়েনি।”
সবুরা বেগমের স্বামী নেই, তিন মেয়েকে নিয়ে মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চলে। তিনি বলেন,“আজ কাজও পাইনি, জানি না রাতে পেট ভরবে কিনা।”
সালেমা বেগম জানান, তার স্বামী প্রতিবন্ধী। নদীর কিনারায় একচালা টিনের ঘরে থাকেন তারা—যে ঘরটি যেকোনো মুহূর্তে নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে।
সাহেরা খাতুন বলেন,“আমার স্বামী আমাকে দেখেও না। আমার বাড়ি ৯ বার ভাঙেছে। এখন কোথায় যাব জানি না।”
এছাড়া আমিনুল ইসলাম, আইয়ুব আলীসহ আরও অনেকে জানান, তাদেরও ঘরবাড়ি বারবার নদীগর্ভে চলে গেছে। কেউ কেউ একবেলা খাবার জোটাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
চরবাসীর টিকে থাকার সংগ্রাম
কুড়িগ্রাম জেলা চর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন,“কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু এই ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এখনো সরকারের পুনর্বাসন সুবিধা পায়নি। এমনকি নদীভাঙা মানুষের সঠিক সংখ্যা সরকারের নথিতেও নেই।”
তিনি আরও জানান,“গত দশ বছরে প্রায় এক লাখ মানুষ নদীভাঙনের কারণে তাদের ঠিকানা বদল করতে বাধ্য হয়েছে। এতে সামাজিক বন্ধন ছিন্ন হচ্ছে, পরিবার বিচ্ছিন্ন হচ্ছে।”
কুড়িগ্রাম জেলার আয়তন ২,২২৯ বর্গকিলোমিটার, যার মধ্যে প্রায় ৮৫০ বর্গকিলোমিটার চরাঞ্চল। এখানে বসবাস করে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ, যাদের অধিকাংশই শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
অধ্যাপক বেবু আরও বলেন,“১৯৯৮ সালে পাহাড়িদের আন্দোলনের পর সরকার পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করতে বাধ্য হয়েছিল। তেমনি চরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে একটি ‘চর বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ গঠন এখন সময়ের দাবি। তা না হলে কুড়িগ্রাম আবারও ১৯৭৪ সালের মতো দুর্ভিক্ষের মুখে পড়বে।”
বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৫ | |
| ওয়াক্ত | সময় |
| সুবহে সাদিক | ভোর ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ |
| সূর্যোদয় | ভোর ৭:০৭ পূর্বাহ্ণ |
| যোহর | দুপুর ১২:৪২ অপরাহ্ণ |
| আছর | বিকাল ৩:৫৩ অপরাহ্ণ |
| মাগরিব | সন্ধ্যা ৬:১৭ অপরাহ্ণ |
| এশা | রাত ৭:৩৪ অপরাহ্ণ |