আজ শুক্রবার | ২২শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৭ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি | ভোর ৫:৩৫

সরকার যে রূপরেখা প্রণয়ন করেছে দেশের জনগণের মতো সেনাবাহিনীও চায় সেই রূপরেখা অনুযায়ী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। নির্বাচন হলে দেশের স্থিতিশীলতা আরও ভালো হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে আরও স্বাভাবিক হবে। সেনাবাহিনী তখন সেনানিবাসে ফিরে যেতে পারবে। আমরা সেটার দিকেই তাকিয়ে আছি। গতকাল দুপুর ২টায় ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেস ‘এ’-তে সেনা সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কিত আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব মন্তব্য করেছেন জেনারেল অফিসার কমান্ডিং, সদর দপ্তর আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড (জিওসি আর্টডক) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাইনুর রহমান। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে সরকারের ঘোষিত রূপরেখার ওপর ভিত্তি করে আমরা যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। আমাদের যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সীমিত আকারে এখন চলছে নির্বাচনের সময় আমাদের কী করণীয় সেটাকে ফোকাস করেই আমরা প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের প্রশিক্ষণের সঙ্গে একটি বিষয় সম্পর্কিত, তা হলো শান্তিকালীন সময়ে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব হলো যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেয়া। আমরা বলে থাকি ‘উই ট্রেইন এজ উই ফাইট’। গত ১৫ মাস সেনাবাহিনী বাইরে আছে। নির্বাচন পর্যন্ত বা তার কিছুটা পরেও যদি বাইরে থাকতে হয় তাহলে আরও কিছুদিন বাইরে থাকতে হবে। এতে করে আমাদের প্রশিক্ষণ বিঘ্নিত হচ্ছে। পাশাপাশি যে পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে গত ১৫ মাস চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে সেনাবাহিনী, এটা সহজ পরিস্থিতি ছিল না। অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং ও প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে দায়িত্ব পালন করছে সেনাবাহিনী। এ ধরনের পরিস্থিতি বাংলাদেশ ফেস করেনি। এ জন্য আমরাও চাই একটা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক এবং আমরা সেনানিবাসে ফেরত আসতে পারি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কথা উল্লেখ করে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি কিছু স্বার্থান্বেষী মহল সেনাবাহিনীকে বিশেষ করে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য মিথ্যা-বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাই আমি দেশবাসীকে নিশ্চিত করতে চাই- সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য, সেনাবাহিনী প্রধান এবং সেনাবাহিনীর সিনিয়র লিডারশিপের প্রতি শতভাগ আনুগত্য ও বিশ্বস্ততা রয়েছে। আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন আমাদের সেনাবাহিনীর সদস্যরা আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ ও আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধ আরও বেশি। তাই সকলের প্রতি অনুরোধ থাকবে- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এসব অপপ্রচারকে পেছনে ফেলে চলুন ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাই। সেনাবাহিনীর ওপর অর্পিত দায়িত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, যেই দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দেয়া হয়েছে ও ভবিষ্যতে যেই দায়িত্ব দেয়া হবে সেনাবাহিনী তা যথাযথভাবে পালন করেছে, চিরদিন করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। তাই সোসাল মিডিয়ার প্রচারণার বিরুদ্ধে আমাদের তেমন কিছু করার প্রয়োজন আছে বলেও আমরা মনে করি না। আমাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে, আমরা কী কী করি তা সেখানে উল্লেখ থাকে। আসলে মিথ্যাকে বিতাড়িত করার জন্য সত্যই যথেষ্ট। আমরা সত্য দিয়ে ও আমাদের কাজের মাধ্যমেই সেগুলো প্রমাণ করতে চাই।
গত ১৫ মাসে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সেনাবাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে তিনি বলেন, গত ১৫ বছর যেই আবেগের প্রকাশ ঘটানো যায়নি, এর তো একটা বহিঃপ্রকাশ আছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের অনেক মিশনারি দখল কিছুটা হলেও অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে আপনি পারফেক্ট একটা আউটকাম আশা করতে পারেন না। এই সময়ের মধ্যে কুমিল্লা-নোয়াখালীর বন্যা, থানা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব- এমন কোনো কাজ নেই সেনাবাহিনী করেনি। ৪০ বা ৫০ হাজার সেনা সদস্য তাদের প্রাথমিক দায়িত্ব কিন্তু এটা না। তারা কিন্তু তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করে গেছে। তাই আমি বলবো, সেনাবাহিনী না থাকলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কতোটুকু অবনতি হতো তা ধারণাও করা যায় না।
বনলতা এক্সপ্রেস, পাহাড়সহ বিভিন্ন সময়ে আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারের বিষয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইনুর রহমান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যেটা হচ্ছে সেটাকে একটু আলাদা করে বিবেচনা করতে হবে। কারণ কিছুদিন আগেই খাগড়াছড়িতে কী হয়েছে, তারও আগে রাঙ্গামাটিতে কী হয়েছে তা সবাই জানে। বান্দারবানে কুকি-চিন একটু মেপে চলছে। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্ডার দিয়ে অস্ত্র ঢুকলেই সেটি ঢাকামুখী আসবে, এটি সঠিক নয়। এরপরও আমরা আমাদের অভিযান আরও জোরদার করবো, নজরদারি বাড়াবো। আর আমরাই তো একমাত্র সংস্থা না। আমরা আশাবাদী অন্যরাও একই কাজ করবে। আমাদের এমন একটা প্রস্তুতি থাকতে হবে, এই অস্ত্রের চালান যেন ঢাকায় না আসতে পারে। আর কিছু যদি এসেও থাকে সেগুলো যেন আমরা মোকাবিলা করতে পারি।
এর আগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেনা সদরের পক্ষ থেকে সামরিক অপারেশন্সের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দেওয়ান মো. মঞ্জুর হোসেন বলেন, এযাবৎ আমরা বিভিন্ন বাহিনীর হারিয়ে যাওয়া শতকরা ৮১ ভাগ অস্ত্র উদ্ধারে সক্ষম হয়েছি এবং শতকরা ৭৩ ভাগ হারিয়ে যাওয়া গোলা-বারুদ উদ্ধার করেছি। আমরা ১৯ হাজারের ওপরে অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছি। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীও রয়েছে। এসবের পাশাপাশি আমরা গত জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা সহযোগিতা প্রদান করছি। এখনো ২৭ জন আমাদের ঢাকা সিএমএইচে চিকিৎসা নিচ্ছেন। দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলার পাশাপাশি আমরা দূতাবাসগুলোতেও নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য আমাদের নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় করেছে। সে অনুযায়ী সেনাবাহিনীও তাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনী নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। এবার নির্বাচনে আমাদের ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ সেনা সদস্য মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত থাকবে। যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। আমাদের পরিকল্পনায় জেলা পর্যায়ে, উপজেলা পর্যায়ে এমনকি ক্ষেত্র বিশেষ ক্যাম্প স্থাপন করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করবো। আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য যা যা প্রয়োজন তা করার জন্য বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত।
বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৫ | |
| ওয়াক্ত | সময় |
| সুবহে সাদিক | ভোর ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ |
| সূর্যোদয় | ভোর ৭:০৭ পূর্বাহ্ণ |
| যোহর | দুপুর ১২:৪২ অপরাহ্ণ |
| আছর | বিকাল ৩:৫৩ অপরাহ্ণ |
| মাগরিব | সন্ধ্যা ৬:১৭ অপরাহ্ণ |
| এশা | রাত ৭:৩৪ অপরাহ্ণ |