আজ শুক্রবার | ২২শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৭ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি | ভোর ৫:৩৫

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট ও জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারিসহ পাঁচ দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্মারকলিপি দিয়েছে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ সমমনা ৮ দল। বৃহস্পতিবার দুপুরে আন্দোলনরত ৮ দলের প্রতিনিধিরা প্রধান উপদেষ্টার সরকারি
বাসভবন যমুনায় গিয়ে এই স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।
প্রতিনিধিদলে ছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) সহ-সভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির (বিডিপি) সেক্রেটারি মুহা. নিজামুল হক।
এদিকে, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বর ও পল্টন মোড়ে জড়ো হতে থাকেন জামায়াতসহ অন্যান্য দলের কর্মী-সমর্থকরা। বেলা ১১টার পর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে মিছিল নিয়ে পুরানা পল্টনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হন তারা। এখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য শেষে দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা নিয়ে রওনা হয় আটটি ইসলামী দলের নেতাকর্মীরা। এর আগে পল্টন মোড়ের সমাবেশে জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের গণভোট ও জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির দাবি জানিয়ে বলেছেন, ‘সোজা আঙ্গুলে যদি ঘি না ওঠে আঙ্গুল বাঁকা করবো, ঘি আমাদের লাগবেই, নো হাঙ্কি পাঙ্কি।’
তিনি বলেন, আমরা রাজপথে এসেছি, প্রয়োজনে আবার রক্ত দেবো, প্রয়োজনে আবার জীবন দেবো। আমাদের জুলাইয়ের অর্জনকে ব্যর্থ হতে দেবো না। জুলাইয়ের সনদ বাংলার মাটিতে দেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে।
তিনি বলেন, আলোচনা, সেই বলবো এই বলবো করতে করতে নির্বাচনের সময় কাছাকাছি চলে আসছে। এই চালাকি সরকারকে বিপদে ফেলবে এবং আমার দল (জামায়াত) দাবি আদায়ের নতুন পন্থা আবিষ্কার করবে। ডা. তাহের জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট করার দাবি জানিয়ে বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরেও গণভোট করতে আইনি কোনো বাধা নেই। গণভোটের জন্য টাকা খরচের অজুহাত উড়িয়ে দিয়ে ডা. তাহের বলেন, দেশে একদিনে যে পরিমাণ চাঁদাবাজি হয়, তা বন্ধ হলে প্রত্যেক দিন একটি করে গণভোট করা গেলেও টাকার অভাব হবে না। তিনি বলেন, জামায়াত শান্তি ও সমাধান চায় বলেই আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে এবং এর জন্য ইতিমধ্যেই একটি কমিটিও গঠন করেছে।
ডা. তাহের সরকারকে ‘আলোচনা কেবল তোমরাই করো’ বলে ঘুমিয়ে না থেকে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়া এবং রেফারির ভূমিকা রাখার দাবি জানান।
এ সময় তিনি বলেন, আমি বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মহোদয়কে সকালেও ফোন করার জন্য চেষ্টা করেছিলাম, পাই নাই। ইনশাআল্লাহ এই প্রোগ্রামের পর থেকে আমি আবার ওনাকে ফোন করার চেষ্টা করবো। ওনাকে আমরা ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করবো যেন বিএনপি’র পক্ষ থেকেও দ্রুত এই আলোচনায় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত আসে।
ডা. তাহের বলেন, জাতিকে আর রাজনৈতিক বিদ্বেষ নয়, আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে, ভোটকেন্দ্র কীভাবে নিরাপদ থাকবে এবং ভোট ডাকাতি আর হবে না এসব বিষয়ে মেজর রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যে আসতে হবে। তিনি বলেন, প্রতিটি দল টেলিভিশনে ঘোষণা করবে যে তারা কোনো কেন্দ্র দখল করবে না, করলে সেই আসনের নির্বাচন বাতিল হবে।
প্রধান উপদেষ্টা এবং নির্বাচন কমিশনের কাছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার জন্য প্রকাশ্যে স্টেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে ডা. তাহের বলেন, ৫৪ বছরে দেশের মানুষ সঠিক নির্বাচন পায়নি এবং আরেকটি প্রশাসনের নির্বাচনকে কোনো ভাবেই মেনে নেবে না। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দেয়ার পরও কোনো উন্নতি না হলে আগামী ১১ তারিখ ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়া হবে, যেখানে ঢাকা মহানগরী জনতার মহানগরী হবে এবং অবিলম্বে সনদ বাস্তবায়নের দাবি জানানো হবে।
সমাবেশে ইসলামী আন্দোলনের দলের মুখপাত্র ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, বিএনপি সংস্কারকে বারংবার বাধাগ্রস্ত করেছে, তারা রাষ্ট্র সংস্কার চায় না, সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি চায় না। তাদের সিনিয়র নেতাদের কথাবার্তায় এটা বারংবার স্পষ্ট হয়েছে। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের পরে দেশকে আর কোনো অবস্থায় আগের পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে দেয়া যাবে না। তাই সংস্কার করতেই হবে। সেজন্য অবিলম্বে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ দিতে হবে এবং জুলাই সনদের আইনীভিত্তি নিশ্চিত করতে তফসিলের আগেই গণভোট দিতে হবে। তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরে আমাদের রাজপথে নামতে হবে, দাবি আদায়ে আন্দোলন করতে হবে তা আমরা ভাবি নাই, কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের বাধ্য করেছে। তাদের তিনটা অঙ্গীকার ছিল। আমরা বলবো, সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করুন। সংস্কারের জন্য কমিশন হয়েছে, ঐকমত্য কমিশন হয়েছে, জুলাই সনদ হয়েছে, সনদে স্বাক্ষর হয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছে, সংস্কার বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়েও সকলে একমত হয়েছে; এখন গড়িমসি কীসের? আগামী ১০ তারিখের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি না হলে আমরা ঢাকায় লোকে লোকারণ্য করে সমাবেশ করবো; ইনশাআল্লাহ।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান শেষে সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার অবিলম্বে ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের আদেশ জারির জোর দাবি জানিয়েছেন।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যদি এই ঐতিহাসিক সনদ বাস্তবায়নে বিলম্ব বা ষড়যন্ত্রের সুযোগ দেয়া হয়, তবে প্রধান উপদেষ্টা জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের যে মর্যাদা অর্জন করেছেন, তা নষ্ট করবেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে চলতি নভেম্বর মাসের মধ্যেই গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেয়ার কাজ শুরু করার দাবি জানান গোলাম পরওয়ার। গোলাম পরওয়ার বলেন, বাংলাদেশের মানুষের গণআকাঙ্ক্ষা এবং বহু রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোকে পরিবর্তন করে একটি নতুন রাষ্ট্র কাঠামো প্রস্তুত করা প্রয়োজন। আর সেই লক্ষ্যেই ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুত করেছে।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, আপনি (প্রধান উপদেষ্টা) নিজেই গণআকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান জানিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করেছিলেন এবং সব রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবকে একমত করার জন্য ঐকমত্য কমিশন গঠন করেছিলেন। আপনি ঐকমত্য কমিশনের প্রধান হিসেবে সরকারেরও প্রধান।সূত্র: মানবজমিন
বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৫ | |
| ওয়াক্ত | সময় |
| সুবহে সাদিক | ভোর ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ |
| সূর্যোদয় | ভোর ৭:০৭ পূর্বাহ্ণ |
| যোহর | দুপুর ১২:৪২ অপরাহ্ণ |
| আছর | বিকাল ৩:৫৩ অপরাহ্ণ |
| মাগরিব | সন্ধ্যা ৬:১৭ অপরাহ্ণ |
| এশা | রাত ৭:৩৪ অপরাহ্ণ |