আজ শুক্রবার | ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৮শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |৭ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি | রাত ৩:১৫

প্রকৌশলী সাদমান রশিদ: ➲ বিদ্যুৎ বিভাগের প্রধান সমস্যাঃ
বাজেট ঘাটতির সমপরিমান অর্থ সরকার থেকে ভর্তুকির মাধ্যমে না পাওয়ার কারনে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলোকে সময়মত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে পারছে না। ফলস্বরূপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও জ্বালানীর অভাবে বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। বলা বাহুল্য যে, গত বছরের তুলনায় দেশে গড়ে ২,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকা সত্ত্বেওদেশের বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিং লক্ষণীয়। পরিকল্পনার এতই অভাব ছিল যে, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সর্বমোট ১২ বার বিদ্যুতের মুল্য ১১৩% বৃদ্ধি করেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে সৃষ্ট বাজেট ঘাটতি নিরসনে সফল হয়নি। এই বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য সরকারকে ৪৬,৫০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে, যা দেশের বর্তমান আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে প্রদান করা দুরূহ। অথবা বিকল্প হিসাবে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে তার বাল্ক বিদ্যুৎ বিক্রয় মূল্য গড়ে ৫ টাকা বৃদ্ধি করে এই ঘাটতি সমন্বয় করতে হবে। যদি এই বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি বাস্তবায়িত হয়, তবে দেশের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির হার ২০% ছাড়িয়ে যেতে পারে, যা জাতীয় অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
১। অপরিকল্পিত ভাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা।
২। অভ্যন্তরীণ গ্যাস উত্তোলনের ব্যবস্থা না করে আমদানি ভিত্তিক লিকুইড ফুয়েল ও এলএনজি উপর ভিত্তি করে বিদ্যুৎ খাতের জন্য ফুয়েল মিক্স পরিকল্পনা।
৩। গ্যাস/এলএনজি ভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে অগ্রাধিকার না দিয়ে লিকুইড ফুয়েল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেয়ার কারনে দেশে আনুপাতিক হারে লিকুইড ফুয়েল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিমাণ বেশি।
৪। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের পরিকল্পনা ও নির্মাণের সমন্বয়হীনতা।
৫। অতি উচ্চ ট্যারিফে বিপুল সংখ্যক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন প্রদান। উদাহরণস্বরূপঃ
৬। ২০১৭ সালে অবিবেচিতভাবে ১,০০০ মেগাওয়াট ডিজেল ভিত্তিকবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হয়, যার উৎপাদন খরচ অতিউচ্চ এবং কেন্দ্রগুলোর প্লান্ট ইউটিলাইজেশন (Plant Load Factor) খুবই কম, যা ২% থেকে ১০% এর মধ্যে ছিল। ফলশ্রুতিতে গড় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায়।
১। খুলনা জোনে গ্যাসের প্রাপ্যতা না থাকা সত্ত্বেও রূপসাতে ৮০০ মেগাওয়াট ডুয়াল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা।
২। মেঘনাঘাট এলাকায় গ্যাসের অপ্রতুলতা থাকা সত্ত্বেও রিলায়েন্সের ৭১৮ মেগাওয়াট সহ আরও ৫৮০ মেগাওয়াট করে দুটি কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা।
৩। স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাঃ ২৮,৩৫৯ মেগাওয়াট
শীতকালে অব্যবহৃত উৎপাদন ক্ষমতাঃ ২১,৪৫৯ মেগাওয়াট
১। দেশের অভ্যন্তরীণ Onshore গ্যাস উত্তোলনের পদক্ষেপ এবং Offshore গ্যাস প্রাপ্যতার সম্ভাব্যতা যাচাই না করার কারণে দেশে গ্যাস উত্তোলন বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়নি। উপরন্তু বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য পরবর্তিতে বেশ কিছু গ্যাস/এলএনজি ভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি প্রদান করে। ফলে আমদানি ভিত্তিক এলএনজি এর উপরে দেশের নির্ভরতা বেড়ে যায়। গ্যাস উৎপাদন, গ্যাস সঞ্চালন লাইন ও এফএসআরইউ (FSRU) এর সক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণে এলএনজি আমদানি করেও বিদ্যুৎ খাতের জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাস/এলএনজি সরবারহ করতে ব্যর্থ হয়। ফলে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও অপ্রতুল গ্যাস/এলএনজি সরবরাহের কারণে গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালাতে সক্ষম হয়নি। উল্লেখ্য যে, আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত জ্বালানির প্রায়৬৫% আমদানি নির্ভর।
২। আমাদের দেশের মোট স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় ২৩%(৬,৪০৯ মেগাওয়াট) লিকুইড ফুয়েল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যার একটি বড় অংশ অপরিকল্পিতভাবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্থাপন করা হয়। যার ফলস্বরূপ গড় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়।
১। কম উৎপাদন খরচের গ্যাস/এলএনজি ভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অগ্রাধিকার না দিয়ে সরকার বেশি উৎপাদন খরচের লিকুইড ফুয়েল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে অগ্রাধিকার দেয়।
১। বিভিন্ন সময় ও বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হলেও, সেই কেন্দ্রগুলোর সাথে সমন্বয় রেখে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন এবং সমন্বিত সাব-স্টেশন নির্মাণ করা হয়নি। যার ফলে উৎপাদিত বিদ্যুৎ গ্রাহকের কাছে বণ্টন সম্ভব হয়নি। ফলশ্রুতিতে অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তার ক্ষমতার সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ব্যর্থ হয়। ১৭ বছর অতিবাহিত হলেও এখনও, এই সমস্যা সম্পূর্ণভাবে সমাধান করা সম্ভব হয়নি।
উদাহরণস্বরূপঃ পরিকল্পনার অভাবে গ্রিড সাব-স্টেশনের ক্যাপাসিটির সীমাবদ্ধতার কারনে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও মেঘনাঘাটে প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট এবং আমিনবাজারে প্রায় ২০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
২। দেশের অভ্যন্তরীণ গ্যাস উত্তোলনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া। বর্তমানে প্রতি বছর গড়ে ১০০ mmcfd হারে গ্যাস উৎপাদন কমে যাচ্ছে। পেট্রোবাংলার পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৮ সালের মধ্যে ৬৯টি নতুন কূপখনন করা হলে ০১ tcf গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা আছে এবং ৩১টি পুরাতনকূপ ওয়ার্কওভার হলে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ mmcfd হারে গ্যাস উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে। যা দেশের গ্যাস উত্তোলনের পরিমান কেসমন্বয় করবে কিন্তু গ্যাসের যে অতিরিক্ত চাহিদা আছে তা পূরণে সামর্থ্যহবে না। সমীক্ষা অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ Onshore গ্যাসের মজুদ যেহেতু অপর্যাপ্ত, সেহেতু Offshore এ গ্যাস উত্তোলনের জন্য খুব দ্রুত সমীক্ষাশুরু করা এবং সমীক্ষা ফলাফলের উপর ভিত্তি করে গ্যাস উত্তোলনের ব্যবস্থা করা। যদি সমীক্ষার ফলাফল আশাব্যঞ্জক না হয়, তবে মিয়ানমার থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস আমদানি করার দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করা।
৩। বিদ্যুৎ কেন্দ্র অনুমোদনের সময় জ্বালানী প্রাপ্যতা ও উৎপাদন খরচ বিবেচনা করা। আমদানি ভিত্তিক এলএনজি মূল্য কমানোর জন্য স্পটমার্কেট থেকে কেনার চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে ক্রয়ের অগ্রাধিকার দেওয়া এবং আমদানিকৃত এলএনজি এর অপারেশন খরচ কমানো ও সারা বছর যাবত নির্বিঘ্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য FSRU এর পরিবর্তে স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করা। উল্লেখ্য যে, চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) এলএনজি আমদানির আনুমানিক ব্যয় প্রায় ৫৮০ বিলিয়ন টাকা নির্ধারণ করা হয়। বিপরীতে, অভ্যন্তরীণ গ্যাস অনুসন্ধান জরিপ এবং কূপ খননের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) চলমান এবং নতুন প্রকল্পগুলির জন্য মোট ১১.২৯ বিলিয়ন টাকা বরাদ্দ করা হয়। এখানে লক্ষণীয় যে, চলতি অর্থবছরে এলএনজি আমদানিতে ব্যয় অভ্যন্তরীণ গ্যাস অনুসন্ধান এবং কূপ খননের জন্য বরাদ্দের চেয়ে ৫১ গুণ বেশি।
৪। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের পরিকল্পনা ও নির্মাণের সমন্বয়হীনতা দূর করা।
৫। ২০২৮ সাল থেকে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত লিকুইড ফুয়েল ভিত্তিক ৪,৩৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে। তৎকালীন সময়ে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ এর চাহিদার উপর ভিত্তি করে কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধএবং কিছু নতুন গ্যাস ভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও লোড পকেট নির্ধারন করে কিছু ইঞ্জিন চালিত লিকুইড ফুয়েল/গ্যাস পিকিং বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করা। এছাড়া বিদ্যুতের চাহিদা ও গ্রিডের স্থিতিশীলতা বিবেচনা করে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করা।
৬। পুরাতন ও ফুয়েল ইন-ইফিসিয়েন্ট বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে, সেই সকলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ফিক্সড কস্ট রহিত করা এবং ভবিষ্যতে চাহিদার উপর ভিত্তি করে ফুয়েল ইফিসিয়েন্ট নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিস্থাপন করা।
উপরে বর্নিত পদক্ষেপের মাধ্যমে যতদিন পর্যন্ত বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বাজেট ঘাটতি নিরসন সম্ভব হচ্ছে না, সেই পর্যন্ত সরকারী ভর্তুকি প্রদান এবং/অথবা বিদেশী আর্থিক সহযোগী সংগঠনের মাধ্যমে বিশেষ তহবিলগঠনের দ্বারা উক্ত বাজেট ঘাটতি পূরনের উদ্যোগ নিতে হবে।
বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৫ | |
| ওয়াক্ত | সময় |
| সুবহে সাদিক | ভোর ৬:০২ পূর্বাহ্ণ |
| সূর্যোদয় | ভোর ৭:২১ পূর্বাহ্ণ |
| যোহর | দুপুর ১২:৪৬ অপরাহ্ণ |
| আছর | বিকাল ৩:৫০ অপরাহ্ণ |
| মাগরিব | সন্ধ্যা ৬:১১ অপরাহ্ণ |
| এশা | রাত ৭:৩০ অপরাহ্ণ |