আজ শুক্রবার | ৮ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৪শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |২রা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি | রাত ৪:০০
১৯৭১ সালের এই দিনে (২৪ সেপ্টেম্বর) হবিগঞ্জের কালেঙ্গা জঙ্গলে পাক সেনাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত বাহিনী একটি সফল অ্যামবুশ পরিচালনা করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় নিয়মিত সেনা সদস্যদের নিয়ে গঠিত ‘এস ফোর্স’ কর্তৃক পরিচালিত এই সফল অভিযানটি মহান মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনীর বীরত্ব ও কৌশলগত সক্ষমতার অনন্য উদাহরণ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।
‘এস ফোর্স’ ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ মহকুমা এলাকায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে অংশ নেয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল হবিগঞ্জের ‘কালেঙ্গা জঙ্গলে অ্যামবুশ’।
সিলেট অভিমুখে চলাচলের জন্য ‘এস ফোর্স’ এর গেরিলারা কালেঙ্গা জঙ্গল ব্যবহার করতেন। পাকিস্তান সেনারা এ খবর জানতে পেরে সেখানে তাদের তৎপরতা বাড়ায়। মুক্তিবাহিনীও প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। ২০/২১ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি সেনাদের একটি দল সেখানে প্রবেশ করলে মুক্তিবাহিনীর পুঁতে রাখা অ্যান্টি-পার্সোনেল মাইন বিস্ফোরিত হয় এবং কয়েকজন হতাহত হয়। পাকিস্তানি সেনারা সেখান থেকে সিন্দুরখানের দিকে চলে যায়। পরদিন বেশ কিছু সংখ্যক পাকিস্তানি সেনা এসে মাইন অপসারণ করে এবং পাকিস্তানি সেনারা সেখানে ঘাঁটি নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা ঐদিন যদিও উপস্থিত ছিল তবে আক্রমণ না করে বড় আঘাতের প্রস্তুতি নিতে থাকে।
অবশেষে ২৪ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী কালেঙ্গা-সিন্দুরখান সড়কের পাশে ছোট ছোট পাহাড়ে অবস্থান নিয়ে অ্যামবুশের প্রস্তুতি নিয়ে শত্রুর অপেক্ষায় থাকে। সেদিন পাকিস্তানি সেনাদের একটি দল ২০/২৫ জন সহায়ক রাজাকার সাথে কালেঙ্গার দিকে অগ্রসর হয়। প্রথমে রাজাকাররা ফাঁদের ভেতর দিয়ে চলে গেলেও মুক্তিবাহিনী তাদের আক্রমণ না করে অপেক্ষা করতে থাকে পাকিস্তানি সেনাদের মূল দলের জন্য।
পাকিস্তানি সেনারা ফাঁদের ভেতর প্রবেশ করলে মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে গুলিবর্ষণ শুরু করে। এতে শত্রুদলের সামনের অংশ সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয় এবং অধিকাংশ সৈন্য নিহত হয়। পেছনের পাকিস্তানি সেনারা তাদের সহযোদ্ধাদের উদ্ধারের চেষ্টা করে পাল্টা গুলি চালায়, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা পূর্বে প্রস্তুত করা পরিখায় অবস্থান করায় কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হয়নি। এ সময় অসীম সাহসী নায়েক আবদুল মান্নান শত্রুপক্ষের একজনকে ঘায়েল করার জন্য পরিখা থেকে বেরিয়ে এসে শত্রুর দিকে আক্রমণ করেন । কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত পাকিস্তানি সেনাদের মেশিনগানের গুলিতে তিনি শহীদ হন। তাঁর আত্মত্যাগ মুক্তিযোদ্ধাদের আরো প্রেরণা যোগায়।
এই যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর একজন অফিসারসহ প্রায় ৬১ জন সেনা নিহত হয় এবং আরও অনেকে আহত হয়। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করলেও নিজেদের সামান্য ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বিজয় অর্জন করে।
কালেঙ্গা জঙ্গলের অ্যামবুশ মুক্তিযুদ্ধের এক স্মরণীয় অধ্যায়। সুপরিকল্পিত কৌশল, মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতা এবং আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধ প্রমাণ করে যে পাকিস্তানি সেনাদের আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রও বাঙালির মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫ | |
ওয়াক্ত | সময় |
সুবহে সাদিক | ভোর ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ |
সূর্যোদয় | ভোর ৬:৫৯ পূর্বাহ্ণ |
যোহর | দুপুর ১২:৪৩ অপরাহ্ণ |
আছর | বিকাল ৪:০০ অপরাহ্ণ |
মাগরিব | সন্ধ্যা ৬:২৬ অপরাহ্ণ |
এশা | রাত ৭:৪২ অপরাহ্ণ |