আজ বুধবার | ১৮ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২রা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |৭ই মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি | সকাল ৮:৪৮
‘ঐক্য ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে বিএনপি কোনো আপোষ বিএনপি করবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার বিকালে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘ এই আন্দোলনে আমাদেরও অনেক লোক মারা গেছে, জামায়াতে ইসলামীরও অসংখ্য মারা গেছে… বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনেক লোক মারা গিয়েছে। সুতরাং ঐক্যের প্রশ্নের আমাদের কোনো আপোষ নাই আর গণতন্ত্রের প্রশ্নের আমাদের কোনো আপোষ নাই।”
‘‘ আমরা খুব পরিস্কার করে বলতে চাই, বিএনপি আমরা একটা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি হিসেবে আমরা গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পরিবর্তনটা চাই এবং সেই পরিবর্তনটা পার্লামেন্টের মধ্যে যায়। আমি অনুরোধ করব সকলকে এই বিষয়গুলো ইতিবাচক ভাবে দেখবেন।”
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ জুলাই সনদের কথা আমরা আগেই দিয়ে দিয়েছে। এখন এটা সরকারের দায়িত্ব এটাকে চূড়ান্ত, সরকারের দায়িত্ব এই বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসা, সরকারের দায়িত্ব আমরা ঐক্যমত্যে কোন জায়গায় একমত হচ্ছি না, কোন জায়গায় হচ্ছি সেটা বলুক।”
‘‘আমরা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দেখতে চাই, আমরা এই তরুণদের ভবিষ্যত দেখতে চাই, আমরা এই তরুণদের কর্মসংস্থান করতে চাই, অর্থনীতির বিকাশ ঘটাতে চাই, কৃষক-শ্রমিকের উন্নতি করতে চাই, আমরা মহিলাদের ক্ষমতায় চাই।”
‘‘ এই বিষয়গুলো আমরা এখানে আনতে চাই। আমরা ধর্মীয় স্বাধীনতা চাই। অবশ্যই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এই প্রশ্নে আমরা কখনো আপোষ করিনি, কোনদিনই করব না আমাদের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান সেই পথই দেখিয়েছেন, আমাদের দেশনেত্রী সেই পথই দেখিয়েছেন এবং এখন আমাদের তরুন নেতা তারেক রহমান দীর্ঘ ৮/৯ বছর ধরে সেই পথে এগিয়ে নিয়ে এসেছেন যেখান থেকে আমরা আরও শক্তিশালী হয়েছি, আরও আত্মবিশ্বাস বেড়েছে যে, আমরা বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারব।”
‘বিএনপি ছাড়া আর বিকল্প কিছু দেখি না’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘ যদিও আমি এখন দেখি, বাংলাদেশে প্রায় একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন নির্বা্চন হতে যাচ্ছে। টুকটাক সমালোচনা আছে, এটা-ওটা নিয়ে কথা আছে কিন্তু তারপরেও মানুষের কাছে ভোট দেবার মতো বড় নির্ভরযোগ্য বিকল্প বিএনপি ছাড়া আর কিছু আমি দেখি না।”
‘‘ আমি বিএনপি করি না। কিন্তু বাস্তবটা এটাই …বিএনপি জিতবে।”
‘সবার জন্য বাংলাদেশ গড়তে হবে’
জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক আবদুল হালিম বলেন, ‘‘ এখানে আমরা আজকে অনেক দলের লোকেরা এসেছি, ভিন্ন ধর্মের যারা এই আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন তারাও এসেছে।”
‘‘ আসুন, সবার জন্য বাংলাদেশ, সংখ্যাগরুও নয়, সংখ্যালগুও নয়, আমরা সবাই বাংলাদেশী। সবার জন্য বাংলাদেশ আমরা সবাই মিলে গড়ব ইনশাল্লাহ।”
‘এই লড়াইটা ৩৬ দিনের চমক নয়’
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘‘ ওই লড়াইটা ছিলো ১৬ বছর ৩৬দিনে। কিন্তু কে্উ কেউ এটা মনে করছেন কয়েকদিন এটা চমক।হ্যাঁ শেষ ধাক্কাটা দরকার ছিলো। সবাই মিলে ছাত্র-তুরন-যুবক পেশাজীবীদের সাথে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী সমাজের সর্বস্তরের গৃহবূধ যিনি কখনো মিছিল কি জানেন,রাজপথের লড়াই কী জানেন না তিনি শরিক হয়েছেন…আমরা শেষ ধাক্কা দিয়েছি।”
‘‘ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে যেমন বিকৃত করার চেষ্টা হয়েছে, একটি ব্যক্তি-পরিবারের ইতিহাস তৈরি করা হয়েছিল। এখন আমরা দেখছি ঠিক একইভাবে গোটা লড়াই এবং গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসকে আবার বিকৃত করবার একটা চেষ্টা সেটা আমরা লক্ষ্য করেছি। রাম ছাড়া যেমন রামায়ন লেখার চেষ্টা বিভিন্ন সময় নাকি হয়েছিলো সেটা ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলের জানবাজি যে লড়াই তাদের যে সংগ্রাম পুরো দেশ এবং জনগনকে জাগিয়ে তোলার জন্য সেটা ভুলে গেলে চলবে না।”
‘আওয়ামী লীগ ইজ নট অব পলিটিক্যাল পার্টি’
বিজেপের সভাপতি আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘‘ আওয়ামী লীগ তার মেধায় রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না, প্রতিশোধে বিশ্বাস করে।খুব শিগগিরই আওয়ামী লীগের আওয়াজকরণ হয়ে যাবে… যারা উপলব্ধি করেছে বলবে, আসেন আমরা একসাথে কাজ করি।”
‘‘ এরা জঙ্গি। ভাইয়েরা আমরা এই ট্রাপে পড়বেন না। আওয়ামী লীগ ইজ নট এ পলিটিক্যাল পার্টি। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষ যারা ফেইসবুকে লাল করেছিলো তাদের জীবন লাল করতে ফেলবে, ধবংস করে ফেলবে এই একটা জায়গায় আমরা এক সাথে থাকি। আওয়ামী লীগের ব্যাপারে পুরো জাতিকে আমাদের এক সাথে থাকতে হবে।”
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে এবং অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন ও অধ্যাপক নাহরিন খানের যৌথ পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সালাহ উদ্দিন আহমদ, জাতীয় পার্টি(কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় গণফ্রন্টের টিপু বিশ্বাস, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, নেজামী ইসলাম পার্টির একেএম আশরাফুল হক, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, এনসিপির আজিজুর ইসলাম আদিব, হেফাজতে ইসলামের মাওলানা জোনায়েদ আল হাবিব,এনডিএমের ববি হাজ্জাজ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা মঞ্জরুল হক আফেন্দি, বাংলাদেশ জাসদের নাজমুল হক প্রধান, খেলাফত মজলিশের মাওলানা আহমেদ আলী কাশেমী, গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খান এবং জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান বক্তব্য রাখেন।
এই অনুষ্ঠানে গুম হওয়া ইলিয়াস আলীর সহধর্মিনী তাহসিনা রশদীর লুনা, ফ্যাসিবাদ সরকারের আমলে নির্যাতনের শিকার চিকিৎসক সাখাওয়াত হোসেন সায়ান্থ, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময়ে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাইদের ভাই রমজান আলী, মীর মুগ্ধের বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান, ওয়াসীমের বাবা শফিউল আলম, ইয়ামিনের বাবা মহিউদ্দিন, ফারহান ফাইয়াজের ছোট বোন ফারিন, আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ, পুরানা ঢাকায় বিশ্বজিৎ দাশের বাবা আনন্দ দাস, আবদুল্লাহ বিন জাহিদের মা ফাতেমাতুজ জোহরা, নুরুজ্জামান জনির ছোট ভাই মনিরুজ্জামান হীরা, পারভেজ হোসেনের মেয়ে আবিদা ইসলাম হৃদি, কাজী ফাহমীম জাফরের মা কাজী লুলুল মাকমিম, গুম থেকে বেঁচে যাওয়া বিএনপি গণশিক্ষা বিষয়ক সহ-সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকার খোকন এবং ‘মায়ের ডাক’ এর আহ্বায়ক সানজিদা ইসলাম তুলি, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গু নাভিল, পুলিশের গুলিতে চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়া রেদোয়ান হোসেন রিয়াদ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, এজেডএম জাহিদ হোসেন,গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, বিএলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, কল্যাণ পার্টির শামসুদ্দিন পারভেজ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন পেশার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বুধবার, ২ জুলাই, ২০২৫ | |
ওয়াক্ত | সময় |
সুবহে সাদিক | ভোর ৪:৪৮ পূর্বাহ্ণ |
সূর্যোদয় | ভোর ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ |
যোহর | দুপুর ১:০২ অপরাহ্ণ |
আছর | বিকাল ৪:২১ অপরাহ্ণ |
মাগরিব | সন্ধ্যা ৭:৫০ অপরাহ্ণ |
এশা | রাত ৯:১৭ অপরাহ্ণ |